
অনিন্দিতা সান্যাল
১.
উপলব্ধি
পাতা ঝরছে।বাড়িতে যে বেলপাতাগুলো আসে পুজোর জন্য,সেগুলো আস্তে আস্তে ফুটিফাটা হচ্ছে। গাছগুলোয়ে যে পাতাগুলো আছে,তৈরি হচ্ছে ছুটির জন্য। ওদের ছুটি না হলে নতুনরা কিভাবে আসবে। পুরোনো পাতা আর নতুন পাতায় তো জোর ঝামেলা লেগে যাবে। ওই যাকে বলে প্রজন্মের ফারাক। গাছ নিজেই সেই ব্যবস্থা করে নেয়,বেকার ঝামেলার মধ্যে যায় না। আর পাতাঝরার বিষয়টার দায় শীতকাল নিজের দায়িত্বে নিয়ে ফেলে। ফাঁকা ডালে অনেকরকম পাখি আসে। রংবেরঙের অপরিচিত,পরিচিতি, ছোট বড় অনেক রকম পাখি। দুটো পায়রা জুটি বেঁধেছে বারান্দার ছাতে। গুটুর গুটুর আওয়াজ শুনতে পাই মাঝে মাঝে। সাংসারিক গল্প বোধহয়। দুটো ডিম পেড়েছে। একটা পায়রা সারাদিন ডিম আগলে বসে থাকে। আর তার জুটিদার ফেরে একটা নির্দিষ্ট সময়। কিন্তু ঠিক ফেরে। আমি চিন্তায় থাকি ডিমগুলো ঠিক থাকুক। নতুন পাতা আসার মত ব্যাপার অনেকটা। আবার ভাবি বেশি ভেবে কি করবো,উল্টে যদি নিজেরই নজর লেগে যায়। থাক বরং নিজেদের মত। নিজেরই কত কাজ। দম ফেলার সময় নেই। আবার অন্যের ব্যাপারে মাথা ঘাটানো। গাছের ব্যবস্থাপনা বরং অনেক সপ্রতিভ। সব দিক কি সুন্দর সামলে চলে....দিনকে দিন, মাসকে মাস,বছরের পর বছর।
২.
পেঁয়াজি
সকাল সাড়ে সাতটা,মানে তার বেশ দুই আড়াই ঘণ্টা আগেই সোম থেকে শুক্কুর আমার সকাল শুরু হয়। আজকে বাজার যেতে হয়েছিল। বাড়ির সামনেই। পাঁচশো পেঁয়াজ কিনেছি। সবজিওয়ালা দিদি বেছে বেছে নতুন ছোট ছোট পেঁয়াজ ঝুড়িতে তুলে দিয়েছেন। বললাম ওতো ছোট দিয়ো না,ছোট বড় মিশিয়ে দাও। রান্নার দিদি অতগুলো ছোট পেঁয়াজ দেখে আমার গুষ্টি উদ্ধার করবে। সবজিওয়ালা দিদি বললো, ছোট পেঁয়াজগুলো হল সংসারী পেঁয়াজ। বললাম কেন। বোঝালো এগুলোর খোলা একদম ফিনফিনে, ঝাঁঝ বেশি,দাম কম কিন্তু উপকারী। প্রবচন শোনার মত মনটা ভরে গেল। বললাম আর ওই বড়গুলো! বললো দুর ওগুলো তো হাফ-গেরস্থ পেঁয়াজ। আবার কারণ জানতে চাইলাম। বললো ওগুলো ওপরে খোলা,তার ওপর খোলা, ফাইনালি আবার একটা খোলা। তাই ওজন বেশি আর ধক কম। পাশে আরেকজন বয়স্ক ভদ্রলোক বললেন সবজিওয়ালা দিদির চারটে ছানাপোনা। ও নিজে মহা সংসারী তাই ও যেটা বলছে কিনে নাও। আমিও বহু যুগ ধরে বাজার করছি। বললাম কটা হাফ গেরস্থ আর কটা সংসারী পেঁয়াজ মিশিয়ে দাও দিদি,নইলে আমার রান্নার দিদি আর সংসার দুই হয়ে যাবে। সবজিওয়ালা দিদি হেসে বললো কি হবে। বললাম.....পেঁয়াজি আবার কি!!

পাপখণ্ডকের প্রতিশোধ
অমিতাভ ভট্টাচার্য
ইস্কুলের চাকরি সব বিক্রি হয়ে গেল, মামলা-ফামলা হয়ে নতুন নিয়োগও বন্ধ। বোটানিতে সেকেন্ড ক্লাস এমএসসি-বিএড পতিতপাবন মজুমদারের চাকরি আর জুটল না। সাধারণ পরিবারের ছেলে, চাকরির জন্যে ঘুষ দেওয়ার টাকা নেই — ইচ্ছেও নেই। শিক্ষক হওয়ার মতো বিদ্যেবুদ্ধি যথেষ্টই ছিল। কিন্তু বিধি ডান — সামান্য কটা টিউশনির টাকাতেই পতিতপাবনের দিন গুজরান হচ্ছিল, মানে হাতখরচের চেয়ে একটু বেশি রোজগারে যা গুজরান হয় আর কি । বেসরকারি কোম্পানিতে যে টাকায় দিনে বারো ঘণ্টার কাজ করার সুযোগ পতিতপাবন পাচ্ছিল তাতে সে কেবল বেকার থেকে ছদ্মবেকারই হতো — স্বাবলম্বী হওয়ার তেমন সুযোগ ছিল না । এমনিতে স্বভাবে বেশ শান্তশিষ্ট পতিতপাবন দেশকালের হালচাল দেখে আর পরিবার ও বন্ধুবান্ধবদের খোঁটা শুনতে শুনতে ভেতরে ভেতরে কেমন একটা ক্ষেপে গেল। উচ্চশিক্ষিত হয়ে বেকার থাকার জ্বালায় সে চারপাশের সবাইকে শত্রু ভাবতে আরম্ভ করতে লাগল। আর তার মনে সকলের ওপরে একটা প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছে বেশ জেঁকে বসল।
পতিতপাবন নিরীহ মানুষ। তার প্রতিশোধের উপায় যে হিংসামূলক হবে না তা বলাই বাহুল্য। কী কী করা যায়? যাতে ভালো রোজগারও হয় আবার তার এই হেয় হয়ে থাকার প্রতিশোধও সে নিতে পারে। যে-মস্তিষ্ক এতদিন শক্ত শক্ত বৈজ্ঞানিক নাম মনে রাখার, উদ্ভিদের জটিল জীবনক্রিয়ার নানান রকমফের বোঝার চেষ্টা করত, সেই মস্তিষ্ক এখন অন্য পথ ধরল।
অনেক ভেবে পতিতপবন দেখল, তার নাম এবং গায়ের গাঢ় শ্যামবর্ণ এবং দশাশই চেহারা তার পুঁজি হতে পারে। কর্ডলাইনএ হুগলি-বর্ধমান সীমান্তের কাছে তাঁদের দেশের বাড়ি, রেলস্টেশন থেকে মিনিট পনেরো টোটো চড়েই সেখানে পৌঁছনো যায়। বাড়ি বলতে একটি একটি ইঁটের ও একটি চেঁচাবেড়ার ঘর, ছাদে টালি, লাগোয়া দুকাটার মতো কতগুলো গাছ লাগানো ফাঁকা জমি, আর সেই জমিতে একটা ছোটো জীর্ণ বহুদিনের অব্যবহৃত মন্দির। সেখানে এখন আর কেউ থাকেন না । পতিতপাবন হঠাৎ করেই ঐ দেশের বাড়িতে গিয়ে বাস করতে আরম্ভ করল।
কলকাতাসহ গোটা রাজ্য জুড়ে হুলুসস্থুলুস। হুগলির কোনো এক গ্রামে এক নতুন ভয়ঙ্কর দেবতার নাম সকলের মুখে মুখে। সে-দেবতা নাকি যমের এক রূপ, নাম পাপখণ্ডক। টিভিতে, সোশাল মিডিয়ায়, খবরের কাগজে — সর্বত্র এই দেবতার আলোচনা। দেবতার এক বিশিষ্ট ভক্ত জানাচ্ছেন, পুণ্যর আশা করলে এ দেবতার কাছে আসবেন না, তিনি পুণ্য বিলোন না, স্রেফ পাপখণ্ডন করেন। দেবতার মন্দিরে নানান পাপখণ্ডনের ব্যবস্থা আছে। উপযুক্ত দক্ষিণা দিয়ে সেখানে খুব সামান্য পাপ একবারে স্খলন করা যায়। দেবতার সেই ভক্ত বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন যে এই দেবতা ভারী কৃপণ ও নিষ্ঠুর, পুজোয় খুশি হলেও একবারে অল্প পাপই তিনি মোচন করেন। সেই ভক্ত হাতজোড় করে জনসাধারণের কাছে বার বার অনুরোধ করেছেন — মনে সংশয় নিয়ে অথবা পরখ করার বাসনা নিয়ে এই দেবতার ত্রিসীমানায় আসবেন না । পাপখণ্ডক ভারী উগ্র, তাঁর কোপে বংশধ্বংস, পক্ষাঘাত, অন্ধত্ব, বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি বহু ক্ষতি হতে পারে। এরকম অনেক ঘটনা নাকি ঘটেছে সুতরাং সাধু সাবধান।
বাঙালির ধম্মকম্ম নিয়ে এক সমীক্ষায় দেখা গেছে অত্যন্ত ধার্মিক বাঙালির দেবভক্তিও শূন্যর থেকে সামান্যই বেশি। আবার প্রত্যেক ধার্মিক বাঙালির দেবতাতে ভয় একশতে তে একশ পাঁচ। ধার্মিক বাঙালি আসলে ভগবানের কৃপার থেকে ভগবানের মার নিয়ে বেশি চিন্তিত আর দেবতার আশীর্বাদ পাওয়ার চেয়েও দেবতার গ্রাসে না পড়ার চেষ্টাই তাদের ধম্মকম্মর সারকথা। পুরো ভয়ের কারবার। দুর্গা লক্ষ্মী শিব সরস্বতী ইত্যাদি হলো বাঙালি ধার্মিকদের কাছে ইয়ারদোস্ত দেবতা। তাঁদের পুজোয় তাই ফুর্তি বেশি ভক্তি কম । কালী হলেন হাফ ভক্তি আর হাফ ভয়ের দেবতা। বাঙালি ধার্মিকেরা চমকায় শেতলাদেবী আর শনিদেবকে। শনিদেবতাকে তারা কড়া হেডমাস্টারের চেয়েও বেশি ভয় করে। তাঁকে মনে মনে তারা বলে, প্রভু আর যা-ই করো, আমাদের দিকে কৃপাদৃষ্টি দিও না। ভয়ের চোটে সেই দেবতার পেসাদ পর্যন্ত বাঙালি ধার্মিকেরা ঘরের মধ্যে ঢোকান না, কে জানে পেসাদের সঙ্গে সঙ্গে যদি তিনি স্বয়ংই ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েন, মারের সাবধান নেই। আর শেতলাদেবীর দয়া আটকাতেই তো দুপুরবেলায় পিচরাস্তায় দণ্ডিকাটার বন্দোবস্ত রয়েছে। এমন ভয়ের জমিতে পাপখণ্ডকের মতোন রাগী দেবতার যে রবরবা হবে সে তো জানা কথাই।
হুগলীর সেই পাপখণ্ডকের মন্দির ছোটো এবং জীর্ণ। বীভত্স তাঁর মূর্তি। আধো-অন্ধকারে সেই মূর্তি তেমন ভালো দেখা যায়। মূর্তির ছবি তোলা বা আঁকার কোনো অনুমতি নেই, ছবি তুললে বা আঁকলে কী যে হবে তার কল্পনাও ভয়ঙ্কর। সেই মূর্তি কিসের তৈরি এবং কত পুরনো সেই নিয়ে আলোচনা করাও নাকি নিষিদ্ধ, করলেই সেই বংশধ্বংস, পক্ষাঘাত ইত্যাদির প্রবল সম্ভাবনা। এই মন্দির চত্বরে ঢুকে কেউ হাসে না, কথাও বলে খুব আস্তে আস্তে। এই দেবতাকে বাবা ইত্যাদি পারিবারিক নামে ডাকা নিষেধ — মহারাজা ছাড়া অন্য কোনো সম্বোধন নাকি পাপখণ্ডক পছন্দ করেন না। মন্দির চত্বরেই পাপস্খলনের নানান ব্যবস্থা রয়েছে। দুপুরে চড়া রোদে কিছু নির্দিষ্ট পাথরের ওপর খালি পায়ে আধঘণ্টা দাঁড়াতে হয় — দক্ষিণা পাঁচশ এক। একহাতে একটি পাপস্খলক কেজি পাঁচেক ওজনের পাথর নিয়ে একপায়ে দাঁড়ানোর একটি ব্যবস্থা আছে — দক্ষিণা সাতশ এক। নতজানু হয়ে নরক-উপল মানে কালো এক ধরণের পাথরের নুড়ির ওপরে হাঁটুগেড়ে বসার আয়োজন — একহাজার এক। এ ছাড়াও বেশি দক্ষিণায় জ্বলন্ত কয়লার ওপর দিয়ে হাঁটা কিংবা পেরেকের বিছানায় শোয়ার ব্যবস্থা আছে, তাছাড়াও আছে এবড়ো খেবড়ো সিমেন্টের সরু রাস্তায় দণ্ডিকাটার ব্যবস্থাও। শোনা যায় মন্দিরে আরও অনেক ভিআইপি পাপস্খলনের সিস্টেমও আছে।
মন্দিরের সামনে একটা উঁচু বেদিতে বসে থাকেন এই মন্দিরের সেবায়েত — বিশাল বপু তাঁর, ঘন কৃষ্ণবর্ণ চর্ম, চোখদুটি লাল, পরনে কালো রঙের লুঙ্গি আর ফতুয়া, মাথায় রক্ত রঙের পাগড়ি। তিনি কারুর সঙ্গে বিশেষ কথা বলেন না। কেবল মাঝে মাঝে কৌটো থেকে কী বার করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে আগুনটা খেয়ে ফেলেন। তাঁর বেদীর চারদিকে হরেকরকমের ক্যাকটাস আর নানান বনসাই টবে সাজানো। দেবতার কাছে যাওয়ার আগে তাঁকে দেখেই ধার্মিকদের ভয়ের আঁচ এমন উস্কে ওঠে যে অনেকেই দেবতার দিকে তাকানোর রিস্ক পর্যন্ত নেয় না। ঐ মন্দিরের দেবতার দর্শন আর পাপস্খলনের সবচেয়ে প্রশস্থ সময় হচ্ছে শনি এবং মঙ্গলবারের বারবেলা। সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে ঐ মন্দিরের ত্রিসীমানায় যাওয়া নিষেধ।
পাপখণ্ডকের মহিমা ক্রমে ক্রমে বাড়তে থাকে। শনি মঙ্গলে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ সেই মন্দিরে আসে যায়। স্টেশন থেকে মন্দির পর্যন্ত টোটোর ভাড়া বেড়েছে, প্রাইভেট গাড়ি পার্কিং করে মন্দিরের কাছের লোকাল ছেলেরা দুপয়সা রোজগার করছে। চা-জলখাবারের দোকানও হয়েছে গুটিকয় এবং একটি ছোটো ওষুধের দোকানও মন্দিরের পাশে প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
সন্ধে হব হব। অনলাইনে একটা পাঁচ লাখের নতুন এফডি খুলে পতিতপাবন তার দেশের বাড়ির নতুন দালানকোঠার বৈঠকখানার ঘরে এসে বসে। এতক্ষণে না বোঝার কোনো কারণ নেই যে পাপখণ্ডকের মন্দিরের সেই সেবায়েত হচ্ছে পতিতপাবন। গাছের বয়েস মাপায় তার ছিল খুব আগ্রহ আর সে-কাজে সে ছিল চৌখশ, সেই বুদ্ধিতেই পতিত খুব সুন্দর করে বাঙালির মনস্তত্ত্বকে মেপেছে। যে-মেধা থেকে অনেক ছাত্রছাত্রী উদ্ভিদবিদ্যার পাঠ পেতে পারত চাকরি চোরেদের দৌলতে সেই মেধা এখন পাপখণ্ডক ইন্ড্রাস্ট্রি চালাচ্ছে। আর প্রতিশোধ? পাপস্খলন করে পতিতের ঝোলায় নগদ ভরে দিয়ে ধার্মিক জনতা যখন পায়ে ফোস্কা, কোমড়ে ব্যথা আর হাঁটুতে প্রবল যন্ত্রণা নিয়ে বাড়িতে ফেরে তখন পতিতপাবন কেমন একটা আনন্দ পায়, অনির্বচনীয় আনন্দ। তার দিকে ধার্মিকেরা যখন ভয়ে ভয়ে আড়চোখে তাকায় পতিতের সেই আগের হীনভাব যেন খানিক শান্তি পায়। এ লাইনে সবই ভালো কিন্তু সারাদিন কপ্পুরে আগুন জ্বেলে খেয়ে খেয়ে মুখটা কেমন ম্যাদা মেরে যায়। পতিতপাবনের ইস্কুলের সায়েন্স ক্লাবে শেখা ‘অলৌকিক নয় লৌকিক’-এর কিছু কায়দা তার ব্যবসায় বেশ কাজে লেগে যায়, এই আগুন খাওয়া, পায়ের তলা না পুড়িয়েই জ্বলন্ত কয়লায় হাঁটা, বিশেষ কোনো ব্যথাযন্ত্রণা না পেয়েই পেরেকের বিছানায় খানিকক্ষণ শুয়ে থাকা ইত্যাদি।
বৈঠকখানায় ঢুকে পতিত দেখেন স্থানীয় প্রশাসনের মাথা, কান, চোখ ইত্যাদিরা পতিতের অপেক্ষায় বসে। আজ রাতে আবার তিনি আসবেন যে। তাঁর নিরাপত্তা আর অন্যান্য ব্যবস্থা নিয়ে সামান্য আলোচনা। পতিতপাবনের মনে খুশি হাল্কা হাওয়া দেয়। আজ আবার আসছে ইস্কুলের চাকরিচুরির সেই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা। যার টিকিটি আজও সেই মামলায় কেউ ছুঁতে পারে নি, তিনি তোফা বহাল তবিয়তে ভিভিআপি হয়েই আছেন। কিন্তু পাপের ভয় বলে কথা, সে বাপ-মা-পিসি-মাসি কাউকে ছাড়ে না। তাই তিনি তাঁর ছেলেপিলে আর বাছা বাছা কজন হোয়াইট কলার স্যাঙাত্ নিয়ে মাসে একবার করে পাপখণ্ডকের কাছে আসেন, গোপনে মাঝরাত্তিরে। পতিত তাঁর পাপস্খলনের অভিনব বিধান দিয়েছে। নুড়ি পাথরের ওপর পাক্কা বাইশ মিনিট হামাগুড়ি আর যে-পাথরের ওপরে মানুষ গরমে পাপ খণ্ডাতে দাঁড়ায় সেখানে একশবার নাকে খত। আজ নিয়ে এই তাঁর তৃতীয় দিন হবে। সেই দণ্ডমুণ্ডের কর্তার দৃঢ় ধারণা হয়েছে গত দুবারের হামাগুড়ি আর নাকে খত তাঁর নিজের পাপ খানিক কমিয়েছে। আগে প্রায় রোজই তিনি একটি দুঃস্বপ্ন দেখতেন। দেখতেন যে লক্ষ লক্ষ নারী ঝাঁটা হাতে রাস্তায় তাঁকে তাড়া করেছে আর তিনি ‘দাদা গো বাঁচাও’ বলে রেললাইন দিয়ে ছুটছেন। সেই স্বপ্ন এখনও তিনি দেখেন না যে তা নয়, কিন্তু অত ঘন ঘন নয়। সপ্তাহে একবার। আর এই পাপস্খলনের পুরস্কারস্বরূপ বেশ মোটা টাকা দক্ষিণাই পতিতপাবনকে দ্যান। এইভাবে কিছুদিন চললে পতিতপাবন নিজের পাঁচ চোদ্দং সত্তর পুরুষের বসে খাবার ব্যবস্থা করে ফেলবে। চাকরিচুরির এই দণ্ডমুণ্ডের কর্তাকে প্যাঁচে ফেলা আর তাঁর লুঠের মালে বাটপারি করাই পতিতপাবনের সবচেয়ে বড় প্রতিশোধ, এ কাজে সবচেয়ে বড় পাওনা । এখন দেখা যাক ভবিষ্যতে পাপখণ্ডকের দোকান কেমন চলে।
Copyright © 2025 আক্ষরিক - All Rights Reserved.
Powered by GoDaddy
We use cookies to analyze website traffic and optimize your website experience. By accepting our use of cookies, your data will be aggregated with all other user data.