
না মানুষী দখলদার
শিখর চক্রবর্তী
ভুলে যাওয়া বন্ধুর মতো বিকেলে
জীবনানন্দ নাই বা মনে করালে।
সন্ধ্যার হিম পড়ার আগেই উড়ে গেছে
হিজলের শেষ পাখি জন,
খয়েরি পালকের একটি রেখে গেছে
ঋণ শোধের সাকিন ।
মেঠো খরগোশের মুখে দুধের ধান
শীষ টুকু লেজঝোলা দোয়েলের দোসর ...
আমি যে ভালো না বেসে পারিনা,
হেমন্ত কখন ছাড়িয়ে চলে যাও আমাকে ?
পাশ ফিরে পাই না আমার না-মানুষী দখলদার
তুমি যতটা নক্ষত্রের ধূসর পান্ডুলিপি,
ততটাই আমার শেষ লোকালে উচাটন বাড়ি ফেরা।

পথের আত্মাভিমান
শুক্লা সরকার
পথ চলে গেছে নিজের গন্তব্যে, প্রান্তসীমায়,
সারাদিনের পরিক্রমণ শেষ হলে বিশ্রাম নেবে।
অন্ধকারে স্মৃতি হারিয়ে মধ্যরাতে চুপিসারে
নিজের গৃহ মন্দিরে ফিরবে আশায় ছিল।
পথিকদের সাথে দেখা হবে, ক্লান্ত গোধুলিতে।
নাকি তারাও গৃহহারা আমার মত "কদম কদম বাড়ায়ে চল", শুধু এগিয়ে চলো দীক্ষিত মন্ত্রে!
শ্রান্ত, ক্লান্ত, অবসন্ন শরীরে কিছুক্ষণের নিদ্রা,
তারপর ঠিক ভোরের ডাক হরকরা ডাক দেয়,
চলো, চলো, এগিয়ে চলো, ভোর হয়ে গেছে।
আমাদের কর্তব্য পালন করার সময় এখন!
ঘুমিয়ে পড়লে কি করে হবে পথ,চলো, ওঠো?
সকালের সূর্য উঁকি দিচ্ছে সবুজ গাছের ফাঁকে।
তুমি দেখতে পাচ্ছো পথ,অচেনা শব্দের মধ্যে!
কত চেনামানুষের জীবনকাহিনী লুকিয়ে আছে
তা ভুলে গেলে চলবে কি করে বলোতো তুমি!
তখনও বসন্ত বাতাস নীরবে শোনাচ্ছে গান,
ফুলেরা ছড়াচ্ছে সুমধুর ঘ্রাণ,পাখিদের কলতান,
পথ খেয়াল করলো, নিশান্তিকায় আলোয় রাঙা
পৃথিবী, সূর্যের সেই লাবণ্য এসে ছড়িয়ে পড়েছে
তার আঁকা বাঁকা হয়ে চলা "পথ"শরীরের উপর।
কত কথা,কত ব্যথা,অবেগ,অনুরাগ,ভালবাসা
কত স্বপ্ন ঝরে যাওয়ার গল্প শোনায় পথিকরা।
কত কবিতা লেখে আমায় নিয়ে,এভাবেই জীবন
কাটে, আমার ভালবাসার বসুন্ধরার বয়স বাড়ে।
সকালের সূর্যে স্নান করে নিই আমি প্রাণ ভরে, সন্ধ্যা হলে নীরবতায় ঢাকে নৈঃশব্দের আবরণ।
মধ্যরাতে নক্ষত্রক্ষচিত আকাশ আমায় জ্যোৎস্না
উপহার দেয়, অপরূপা চাঁদ হাতছানি দিয়ে ডাকে
বালিকা পাহাড় নুড়ি পাথরের মালা গেঁথে দেয়,
মেঘ পরিপূর্না যুবতীর মতোই ছোটাছুটি করে,
একটু দূরে শিমূল,পলাশ ছড়িয়ে দেয় তার বুকে প্রকৃতি পরম মহার্ঘ গৌরব বৃদ্ধি করে এ পথেই।
কেউ বলে,"পথেই জীবন,পথেই মরণ আমাদের"
সাথে থাকে রাস্তার বাতি,সুখে দুখে স্মৃতিমেদুর
গল্পের ঠাসা বুননে মুঠোবন্দী পথের উপন্যাস।।

অবগাহন
তপন মুখার্জি
কথা যায়,কথা ফেরে।
মানুষ যায়,মানুষ ফেরে না।
চারদিকে ছড়ানো থাকে তার স্মৃতি টুকরো টুকরো হয়ে।
কখনও মলয় বাতাস, কখনও হাহুতাশ।
ধরতে গেলে পা পিছলায়, হাত পিছলায়, পিছলায় মনও।
পিছলাতে পিছলাতে চোখ সপ্তসাগর।
সেই নোনা জলে স্নান জীবনভর।

কাহে চাও
তাপসী লাহা
দেহ দিও, দিও কায়ক্লেশ,সংগোপনে বেঁধে রেখো কান্না নির্নিমেষ। অচেনা যা ঠেকে নয় সে, তবু তার সাথে থাকে কিছু কথা, সংঘর্ষ, বোঝাপড়া,ঝড়ের মত ক্ষতে দাহ্য নুন পোড়া,ওষুধ বাড়ন্ত, মাঝে আসে জ্বর,মাঘেও সূর্য থাকে, চুপচাপ দেখে যায় উন্মুক্ত সেলাই,শব্দহীন পরভুক মেঘ। এবার বলো নেবে কি আঁচল? ভালোবাসা,ভাগবাটোয়ারা,শরীর ও ছল ছুঁয়ে ঈশ্বরীয় লীলা ।জল ও স্থলের বিপরীত জুড়ে আড়ম্বরে সৃষ্টি যা রচে,খেলে যাও পৃথিবী শরীর গড়ে মুক্তি দিলো মায়ায়,
এলোকেশে কান্না জুড়ে মুক্তি কাহে তবু চাও হে…

পৃথিবী ধ্বংসের আগে
মৈত্রেয়ী বিশ্বাস
পৃথিবী ধ্বংসের আগে উদ্ধত উল্লাসে
পৌঁছে যাব নিশ্চয় মাইলফলকে।
পৃথিবী ধ্বংসের আগে প্রণয় পিপাসা
মিটিয়ে নেবো অমল উচ্ছ্বাসে।
কোথাও থামবো না পৃথিবী ধ্বংসের আগে।
ব্যর্থতার বীজও করবো না রোপণ।
দ্বিধাহীন আনন্দে এঁকে যাবো নিজেরই প্রতিচ্ছবি পৃথিবী ধ্বংসের আগে।
পৃথিবীর সকল অপার বিস্ময় বৈভব নিয়ে ফিরে যাব সকল ধ্বংসের আগে।
ঘুমিয়ে নেবো খু.....ব একবার।
তবু নিস্প্রভ হতে দেবো না স্তবকের পর স্তবকে লেখা মৃত্যুঞ্জয়ী স্বাধীনতা সংগ্রাম।
চন্দন কাঠে দূষিত বিবেক দেবো জ্বালিয়ে।
শুদ্ধতার সমাধি সাজাবো পুষ্পস্তবকে।
তিনরঙ্গা পতাকা পুঁতে দিয়ে যাবো পৃথিবী ধ্বংসের ও আগে।

মোমবাতি
যশোদা নন্দ গোস্বামী
কেটে গেলো আরও একটা দিন,
রক্তিম নরম আলোয়
পল্লবিত সবুজের সমারোহ -
খুশিতে - শীতের আবাহনে সচেষ্ট ।
আবারও একটা দিন -
তেমাথার আকৃতি পাওয়া মোমবাতিটা-
যেন হেমন্তের হাল্কা ঠান্ডাতেই জবুথবু !
পোড়া সলতে টা বুঝি
উঁকি মেরে দেখছে -
সে এলো কিনা !
তীব্র তাপেও যেন নিরুত্তাপ !
জন্মসূচনা যে ওর অগ্নিক্রোড়ে !
সেই থেকে - কত ঝড় ঝাপটা
এসেছে জীবনে -
তবু নেভেনি - পাছে সংসারে আঁধার নামে !
আম্ফান, আয়লা
সকলে পরাজিত !
আজ - স্ব মহিমায় ভাস্বর সবাই -
মোমবাতির মন্ড টা
পড়ে আছে ঘরের এক কোণে !
সুখের অনন্ত সাগর-স্নান ছেড়ে
আসতে চায়না কেউ -
তেমাথার কাছে যুক্তি নিতে !

ভুলতে থাকবো
শিপ্রা চট্টোপাধ্যায়
আমি ভুলতে থাকবো সেই আমিটাকে
তোমার অভ্যাসে থাকা সেই চির চেনা আমিটাকে
প্রশ্ন কর না ! কেন?
আমি গড়তে চেয়েছিলাম নতুন একটা পৃথিবী
আমার অদৃশ্য হাত তোমার ছবি আঁকতো মনের পাতায়।
আমার অনুভূতিগুলো তোমায় স্পর্শ করতো প্রতিনিয়ত,
কিন্তু .......
আজ আমি বুঝতে পারি ভালো থাকা একান্ত নিজস্ব ,
মানুষের মন পরিবর্তনশীল ,ঠিক আবহাওয়ার মতো
কখনো মেঘলা আবার কখনো পরিস্কার, মেঘ মুক্ত!
তোমার পরিবর্তনও অস্বাভাবিক কিছু নয় ।
তাই হল ভয়!
তোমার অভ্যাসে তোমার প্রশ্রয়ে মন মন্দিরে আলোয় আলোকিত হত ।
হৃদয় রুগ্ন হয়েছে আজ
হৃদয় সারানোর দায় আমার একার থাক,
নাহ্, তোমায় কোন দোষ দেব না
শুধু নীরব হবো, এতটাই নীরব তোমার শত চেষ্টাতেও আর হৃদয় গলবে না।
একদিন এই আমি ছোঁব পৃথিবীর সর্বোচ্চ শিখর।
আমার হাসিতে সমুদ্রের ঢেউ খুশিতে হাসবে
আমার নূপুরের ছন্দ শুনে পাখিরা নাচবে
তুমি দেখবে দূর থেকে
কিন্তু কাছে আর আসতে পারবে না
কারণ সেই আমি যে অন্য আমি।
আমি ভুলতে থাকবো সেই আমিটাকে।

খামে ভরা রামধনু
ধ্রুবজ্যোতি ঘোষ
পারমিতা দোহাই তোমার
তুমি কখনো চাঁদ হতে চেয়ো না;
কেননা রাতের অদৃশ্য সূর্যই
কিসের সূর্যহীন নেশায়
চাঁদকে সাজায় ফ্যাকফেকে জ্যোৎস্নায়
বলতে পারি না!
মাঝখানে চাঁদ করে অর্জন
কিছু কিছু অবাঞ্ছিত ধারদেনা!
বরং তুমি জেনো পারমিতা
তুমি নিজস্ব পৃথিবীতে
যেটুকু পাও জোনাকির আলো
সেটুকুই তোমার মন্দের ভাল;
চাঁদের কলঙ্কের মতো
নেই কোনো লুকোনো অনুশোচনা
সেখানে আছে তোমার কিছু সুখের নুনপুতুল টলোমলো,
আর কিছু উটকো দুঃখ অগোছালো!
এখনও কি রেখেছো তুমি জংধরা গয়নার বাক্স জুড়ে
বালিকা বেলার কিছু স্মরণীয় উল্লাস জমকালো?
কোনো এক শাওন বিকেলে
আকাশের গা থেকে আলতো খুলে
অসম্ভব এক রামধনু
গোলাপি খামে পুরে
আমায় কেন যে পাঠিয়েছিলে !
এখনও যে তার রঙের ছিটে
লেগে আছে আমার নির্জন আঙুলে!
একটা গল্প খাপছাড়া
পেলাম কুড়িয়ে
তোমার নিজের আঁকা সাজানো বাগানে;
হঠাৎ হাওয়ার খুনসুটি এসে
আধছেঁড়া কাগজটা অবশেষে কোথায় দিল উড়িয়ে
কোন্ সুদূরে!
কুড়িয়ে পাওয়া সেই গল্পটা
তবুও যেন শেষ হয়েও হয় না শেষ,
কিংবা হয়তো শেষ সংলাপের অবধারিত উন্মেষ,
কে জানে!
এই মায়াবন্দরের কাছে
রয়ে গেছে কি অবুঝ কোনো
ছিন্নপত্রের রেশ?

বিবস্বান
শিবালোক দাস
ইচ্ছে করে,
প্রিয় হই তোমার অপরাধে;
ইচ্ছে করে,
দুবেলা আঙুল চালাই ফুটে ওঠা ধারে;
আদিম খেলায় তুমিই প্রথম চেয়েছিলে
ওল্টাই অন্ধকার,
সেখানে পড়ে আছে আমার একমাত্র
ফ্যান্টম লিম্ব…
এতদিন ছিল না কেউ,
তার নরম কম্পনে হাত রাখার।

কোজাগরি
পাপিয়া নন্দী
চন্দনের পাটার মতোন----
সমস্ত আকাশ জুড়ে,
বিরাজমান কোজাগরী---
ক্লান্তির অমাবস্যা গায়ে মেখে,
নিষ্প্রভ ও ম্লান।
চরাচর ভাসিয়ে দেওয়া,
জ্যোৎস্নার উৎসবে-----
যার দিকে,
তাকিয়ে থাকা যায় অপলক,
অমাবস্যার অমানিশার,
তাকে খুঁজেছ কখনো!
জাহুবীর তীরে,
বয়ে যাওয়া তরঙ্গে-----
তাকে কতবার কত ভাবে,
একদা ভালোবেসেছিলে।
জ্যোৎস্নার তরঙ্গ-----
শরীরে মেখে নিতে নিতে,
কতবার নিয়েছিলে---
পবিত্রতার শপথ।
কতবার তোমার সুখ নিদ্রায়,
তাকে অকপট---
আলিঙ্গন করেছো।
কোজাগরী----
তার ভালোবাসা বিলিয়ে দিয়ে,
হারিয়ে গেছে ওই চরাচরের বুকে!
ক্লান্তির অমাবস্যার নিশিশিকলে,
কোজাগরি আজ নিষ্প্রভ।

সবুজহীন কালো অরণ্য
সুমিতা চৌধুরী
অরণ্য উধাও হচ্ছে
সবুজ নিধন উৎসবে,
সমাজে বাড়ছে বন্য শ্বাপদ
সভ্যতা ধ্বংসের উৎ-শবে!
প্রকৃতির ভারসাম্য বিনষ্ট আজ
বন্যপ্রাণীর চোরা শিকারে,
সৃষ্টিও আজ বড় অসহায়
বন্য লালসার নারী শিকারে!
"বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে"
আজ সাজে শুধুই পোস্টারে,
বন্যের স্থান নিয়েছে বসতি
আর নিরাপত্তাহীন শৈশব আদ্যন্ত আঁধারে মাথা কোড়ে!
সবুজহীন প্রকৃতি
লাবণ্যহীন রুক্ষতায় হানে আঘাত,
শিক্ষাহীন বর্বর বন্য সমাজ
সভ্যতা ধ্বংসে যাচ্ছে সমূলে অধঃপাত!!

সময়ের সরণিতে
সুবীর পাল
ভাঙাচোরা দেওয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে জীর্ণ অতীত
ইটের পাঁজরে প্রাণের অস্তিত্ব সাড়া দেয় এখনো।
একবুক নিশ্বাসে সবুজের নিরীহ স্বপ্ন ধরা দিয়ে যায়
অস্তিত্ব খোঁজে কাঠবিড়ালির , চড়াই পাখির দল।
সবুজের বাতায়নে ছায়া ঘেরা পুরাতন প্রাণের শহর
এদো পুকুর, পচা খালের উপর নড়বড়ে বাঁশের সেতু।
অবাক চোখে পিচ রাস্তার দুপাশে আভিজাত্যের অহংকার
আমি খুঁজি বেড়াই শান্ত প্রাণ কতিপয় গাছের আড়ালে।
অতীত খুঁড়ে ফেলে খুঁজে বেড়াই আমার পুরাতন শহর
কালো ধোঁয়ায় হারিয়ে গেছে সেই সুনীল স্বচ্ছ আকাশ।
অস্থিরতায় নিজের অস্তিত্বের সংকট প্রশ্ন তোলে কাছে এসে
কোলাহলের বর্তমান আনমনা মনে ছোঁয়া দেয় পরিবর্তনের।
সময়ের সরণিতে নেই ভোরের শিশিরে ভেজা শিউলি ফুল
আঁকসি টা আর নেই , পুজোর ফুল সাজানো আছে বাজারে।
প্রাণ হারিয়ে সরল পৃথিবী জটিল আবর্তনের ঘূর্ণিপাকে
ভালো মন্দের আবর্তনে অলিন্দ সুবাসিত মাধবী লতার সাজে।
অতীত আঁকড়ে রাখে , উদাস মন বারে বারে পিছু টানে
প্রবীণের চোখ ভিজে যাওয়া অশ্রুধারায় নবীনের হাত ধরে।
মনে পড়ে যায় , কত ব্যথা, কত দুঃখের,কত দুঃখের স্মৃতি ,
অলস দুপুরে বারান্দায় দাঁড়িয়ে একা, থেকে যাক স্মৃতির তরে।

অলৌকিক প্রেম
অরূপ দত্ত
নদীটির তীরে দাঁড়িয়ে থাকে একা
সকল প্রশ্নে নিরুত্তর,
দূরে এক নৌকা ভেসে থাকে
ঘড়ির কাঁটার মতো সরে সরে যায়,
পুনরায় ফিরে আসে।
বটগাছটি লাল ফিতের বিনুনি,
লাজুক কিশোরী যেন এক।
পাতার আড়াল রেখে বলেছিল,
'ফিরে যাও,কখনও ভোরবেলা এসো আচম্বিত।'
মনে আছে,প্রচন্ড শীত
তার শরীর জড়িয়ে নৌকার রশি,
কুয়াশার চাদর ঢেকে সে এক অলৌকিক প্রেম।
অবিরাম ঢেউ এসে চুমুর শব্দে ভেঙে যাচ্ছে,
যেখানে বটের ডাল,হাওয়ার অজুহাতে
নৌকাটির আপামর শরীর ছুঁয়েছে।

মধ্যরাত্রির সংলাপ
ফাল্গুনী ফাগুন ঘোষ
তোমাকে ভালোবাসি না।
তাই,
মধ্যরাত্রে অন্য রমনীর সঙ্গে
জন্মজন্মান্তরের ভালোবাসায়
প্রতিশ্রতিবদ্ধ হওয়ার
মানসিক এক রমণ
উপভোগ করো তুমি।
তোমাকে ভালোবাসি না।
তাই,
দৈনন্দিন হিসেবের কড়া নিক্তিতে আবেগ মাপি নি কখনও, সেকারণে
আমাদের দিন রাত্রে বিদেশি
উপনিবেশ নোঙর ফেলল।
তোমাকে ভালোবাসি না,
তবুও তোমার থেকে দূরে গিয়ে
আবার ফিরে এলে তুমি
খুব কাঁদবে, যন্ত্রণায় বিদ্ধ হবে তোমার হৃদয়, এক পলের মিথ্যা আবেগ স্মরণ করে তোমার দিনরাত
ডুকরে উঠবে।
সেকারণে, যোজন দূরে গিয়ে
কোঁচড় থেকে 'সাঁঝ' বের করে
তা দিই আমার অন্ধ আবেগে।
তোমার আমার দূরত্বে অবহেলায়
পড়ে থাকে হিসেব নিকেশ।
যে হিসেব নিকেশ নাড়াচাড়া করে
তুমি হতদরিদ্র হয়ে ওঠো।
তোমাকে ভালোবাসি না,
তাই দূরে, আরো দূরে সরে যাই
যাতে তুমি ধনী হয়ে উঠতে পারো।

ঐশ্বরিক এক ফ্রেম
শাশ্বত বোস
আগুন রঙের আবছা আলোয় মায়াকাজলে
মুখ ঢাকে ফ্রেমটা...
আক্ষরিকই সোনার খাঁচা যেন!
ঐশ্বরিক একটা মুখ সেখানে আটকা পড়ে আছে...
অপরিমেয় আলোয়।
এই ঝড় বাদলের শহরে...
যাদের কোন বন্ধু নেই,
তারাও হয়তো ওই ফ্রেমে আটকানো
মুখটার মতোই একলা!
আমার কবিতার শরীর জুড়ে এখন শুধু
কারিগরী বিজ্ঞাপন।
ডানদিক থেকে বাঁ দিক শুধু,
ট্যাব, ব্যাক স্পেস আর শিফট-ডিলিট এর খেলা...
হিজিবিজি শরীর, উপরের দিকে হাত পা
তুলে দাঁড়িয়েছে, যেন...
পৃথিবীর আদর্শ কোন ভরকেন্দ্রে স্থির।
কার্তিকের কুয়াশা ঢুকে পড়েছে ফ্রেমটায়...
তিমির আচ্ছন্নতা নিয়ে সেদিকে চেয়ে থাকে,
হীমশীতল এক ডিমসেদ্ধ!
কুসুমটা খুলে খুলে যাচ্ছে
পশমের লার্ভার মতন...
কবিতা পড়ার লম্বা প্রতীক্ষায়
শুধু ফিরে ফিরে আসে
স্নায়ুর কঙ্কাল!
যেন সহস্র রাত জাগা চাতুরীর
অপার্থিব পুনর্জন্ম!যেতে দিয়ো না
শিবাশীষ ঘোষ
আঁকড়ে ধরো আঁকড়ে ধরো
মুঠোয় ভরে আঁকড়ে ধরো
ফুরিয়ে যেতে দিয়ো না;
মুক্ত ফোঁটা বুকেই থাকুক
এই দামী ঋণ আর না চুকুক,
সকাল থেকে সন্ধ্যে আলোয়
সবটুকুনি পেয়ো না।
ফুরিয়ে যেতে দিয়ো না আর ফুরিয়ে যেতে দিয়ো না।
আঁকড়ে ধরো আঁকড়ে ধরো
যাওয়ার বেলা আঁকড়ে ধরো
হারিয়ে যেতে দিয়ো না;
দুপুর মেখে বিকেল মেখে
লাল গোধূলি স্বপ্ন আঁকে,
পিছুডাকে পথ ঘুরে যাক
দিগন্তে শেষ চেয়ো না।
হারিয়ে যেতে দিয়ো না আর হারিয়ে যেতে দিয়ো না।
আঁকড়ে ধরো আঁকড়ে ধরো
তোমায় দিয়ে আঁকড়ে ধরো
ছাড়িয়ে যেতে দিয়ো না;
রাত পাহারায় বিলিয়ে দেওয়ায়
ভোর না হলে কি আসে যায়,
নিজের করে না পাও যদি
নিজের নিজে হয়ো না।
ছাড়িয়ে যেতে দিয়ো না আর ছাড়িয়ে যেতে দিয়ো না।
-

উদাসী মন
নন্দিতা দাস(নন্দিনী)
উদাসী মন ধায় যেন ঐ শাল মহুয়ার বনে বনে,
প্রকৃতি আজ সবুজ আবির ছড়ালো তার কোণে কোণে।
বৃষ্টি ঝরা বাদল দিনে কালো মেঘে আলোর খেলা,
মেঠো বাঁশি ভাসিয়ে দেয় মাতাল সুরে গানের ভেলা।
রিনিঝিনি নুপূর পায়ে কে ছুটে ওই ঝরণা তলায় ?
শুধাই যখন নামখানি তার সমুখপানে ওমনি মেলায়!
মন ছুটে যায় তারি পানে খুঁজে ফিরি আপন মনে,
হারিয়ে ফেলি আপনারে শাল মহুয়ার গহীন বনে।
বাঁকা সিঁথির পথের ধারে বনময়ূরের পেখম মেলা,
শিশুকে তার খুঁজে পেয়ে হরিণ মায়ের আদর খেলা।
রামধনু আজ আকাশ সাজায় সাতটি রঙের বর্ণছটায়,
কনে-দেখা গোধূলি বেলা ঘোমটা টানে শাল মহুয়ায়।
শাল মহুয়ার মাথার উপর পলাশ রাঙা চাঁদের আলো,
নদীর জলে বাঁকা চাঁদের খেলা যে আজ মন ভুলালো।
বৃষ্টিভেজা শাল মহুয়া আমার পানে হাতটি বাড়ায়,
প্রকৃতি আজ মেতেছে তার অপরূপ এই রূপের খেলায়॥

ফুরিয়ে যাচ্ছি
স্নেহাশিস সৈয়দ
ফেলে দিচ্ছি আমাদের মলিন চাদরগুলিকে। যার প্রতিটি অংশে লেগে থাকা প্রতিবাদ, আমাদের হারিয়ে দিয়েছে অবকাশের মতো। কাফনের চাদর গায়ে তাই সন্তর্পণে রাতের আকাশ দেখে দেহগুলি।
শরীরে শীতলতা নিয়ে সর্পিল গতি প্রতিটি মুহূর্তেের,যেন উগরে দেবে প্রাচীন ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো।...
কিভাবে কবে যেন হাত ছাড়িয়ে অন্য দিগন্তের দিকে এগিয়েছে শ্বেতকায় শিকড়ের ভাষা। তোমাকে যতবার ভালোবাসা দিতে গহীন অন্ধকার চিরে রক্তমাখা হাত এগিয়ে দিয়েছি,তুমি মুখ ফিরিয়ে অন্যমনস্কতায় পূর্ণিমার কথা বলেছো।
ক্ষীণকায়া মৃত নদীর পাশে শুয়ে ভাঙা সেতুর ধারে তোমাকে বন্যতা শেখানো হলো না আর।...
জীবন নয়, এখন শুষে নিচ্ছে পুরনো ঠোঁটের আঠালো রসের অংশবিশেষ। ক্রমশ ক্ষয়ে যাওয়া বংশলতার ঐতিহ্যের আবহমানকাল চলা রক্তের মধ্যে তুমিই বেড়ে উঠছো কেবল।... আমি ফুরিয়ে যাচ্ছি একটু একটু করে।

ফল্গু
অনির্বাণ কুণ্ডু
এত আনন্দ প্রবাহ নিয়ে সহসা কী করে হারালে ?
অনুরাগী ফল্গুর মতো, তৃষিত বালুকা-বেলায় !
পাতাল প্রবাহিনী সেজে, কী দেখাতে চাও?
অন্তঃসলিলা সুখ কী ভাবে ভাসায়,
সুকঠিন ব্রহ্মচর্য, স্থবিরতা ?
সংসারে আশ্রম, আশ্রমে সামগান, যজ্ঞ, যজন
সবই যে ভষ্মসাৎ তোমার মুক্ত কেশে!
শ্রেয়প্রেয় সংঘাত উবে যায় রৌদ্রে শিশিরের মতো,
দর্পণ, দর্শন....সকলেই নিমীলিত শেষে
স্পর্ধিত নিবিড় বিভাজিকায়!
পূর্ণচন্দ্রে বেড়ে ওঠে ফেনিল জোয়ার হয়ে
চরাচর ফিরে পায় প্রাণ, জেগে ওঠে মন
অহল্যার সৌভাগ্যে কে আর ঈর্ষা করে!
ওহে সংশয়হীন,...বলে যাও সে কোন্ উচ্চারণ ?
আশাবরী অরণ্যে ছায়।
Copyright © 2025 আক্ষরিক - All Rights Reserved.
Powered by GoDaddy
We use cookies to analyze website traffic and optimize your website experience. By accepting our use of cookies, your data will be aggregated with all other user data.